সাভার,স্টাফ রিপোর্টার : সাভারের শাহীবাগ এলাকার তিন স্কুল শিক্ষার্থীকে অপহরণের সময় রুহুল আমিন (৩৫) নামে এক অপহরণকারীকে হাতে-নাতে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শাহীবাগ এলাকায় নিউ মডেল কিন্টার গার্ডেন ক্যাডেট হাইস্কুলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। গ্রেফাতারকৃত অপহরণকারী মানিকগঞ্জ জেলার দৌয়লতপুর থানা এলাকার রহিজ উদ্দিন মোল্লার পুত্র বলে জানা যায়। এদিকে শিশুদের পরিবারের সদস্যরা স্কুলের সামনে সিকিউরিটি গার্ড না থাকার কারণে অপহরণকারীরা স্কুলেরর সামনে থেকে শিশুদের অপহরণের সাহস পেয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। এলাকাবাসী জানায়, দুপুরে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে রুহুল আমিনসহ আরও তিন জন ৩য় শ্রেণির মো: আভি (১০), ৪র্থ শ্রেণির টিনা (১১) ও ৩য় শ্রেণি পড়–য়া আচঁল (১০) নামের এই তিন শিক্ষার্থীকে অপহরণের চেষ্টা করে। এসময় শিক্ষার্থীরা চিৎকার করলে আশপাশের দোকানীসহ এলাকাবাসী রুহুল আমিন নামে এক অপহরণকারীকে আটক করে। পরে তাকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে এলাকাবাসী। অপর তিনজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় টিনা নামের এক শিক্ষার্থীর চাচা আকাশ জানান, ২০১২ সালে টিনার বাবা মো: নূর ইসলামকে সাভার থেকে অপহরণ করা হয়। পরে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ থানা এলাকায় তার লাশ পাওয়া যায়। সে ঘটনায় সাভার মডেল থানায় মামলা নং-২(৯)১২ দায়ের করা হয়। যার ১নং আসামি রুহুল আমিন। জানা যায়, প্রায় তিন বছর আগে রাবেয়া আক্তারের সাথে
শিশু শিক্ষার্থী টিনার বাবা নূরুল ইসলামের পরকিয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সে শাহীবাগ মহল্লার বাসিন্দা মৃত আব্দুল মান্নানের পুত্র নূরুল ইসলামের সাথে। এরজের ধরে ২০১২ সালের ২৯ আগস্ট নূরুল ইসলামকে মোবাইলে ফোন করে বাসা থেকে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ থানা এলাকায় নিয়ে যায় রাবেয়া আক্তার। পরে রাবেয়ার স্বামী রুহুল আমিনসহ ৪ জন মিলে নূরুল ইসলামকে হত্যা করে ইলিশা নদীতে ফেলে দেয়। হত্যার ৪ দিন পর নূরুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করে মেহেন্দীঞ্জ থানা পুলিশ। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক রুহুল আমিন (৩০), রাবেয়া (২২) ও লতা (৩০) কে গ্রেফতার করে সাভার মডেল থানা পুলিশ। গত ৬ মাস আগে আসামীরা জামিনে এসে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য একের পর এক হুমকি দিয়ে আসছিল। এর জের ধরে আমার ভাইয়ের হত্যাকারীরা নিহত নূরুল ইসলামের মেয়ে ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রী আরিফা সুলতানা টিনা (১১) ও ৩য় শ্রেণীর ছাত্র আমিও হোসেন আভি (১০) ও বোনের মেয়ে ৩য় শ্রেণীর ছাত্রী আঁচল আক্তর আলো (১০)কে শাহীবাগ এলাকার নিউ মডেল প্রি-ক্যাডেট স্কুলের সামনে থেকে স্কুল ছুটির পর হাত ধরে টানা হেচরা করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে ছোট তিন শিশু শিক্ষার্থীর ছোট চাচা আকাশ মোবাইলে ফ্লেক্সি লোড করার সময় পুরো ঘটনাটি তার নজরে আসে। পরে আকাশ বাধা দিলে তার সাথে থাকা আরো ৩ জন পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় উপস্থিত সাধারণ জনগণ রুহুল আমিনকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
শিশু আভি জানায়, স্কুলের সামনে থেকে আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল রুহুল আমিন। পরে আমার আরো দুই বোন আমাকে ছোটানোর চেষ্টা করলে তাদেরকের টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় আমার আকাশ কাকা দেখে ফেলায় তারা পালিয়ে যায়। পরে রুহুল আমিনকে পুলিশ এসে নিয়ে যায়।
নিউ মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মানান জানান, তিন শিশু অপহরণের ঘটনাটি আমার জানা নেই। আর স্কুলের বাহিরে কে কাকে ধরে নিয়ে গেল বা আরো অন্য কিছু হয়ে গেলেও আমার দেখার দরকার নেই।
সাভার মডেল থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) এমদাদুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় ১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকী আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এই ব্যাপারে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আটক রুহুল আমিনকে থানা হাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের পরই এই অপহরণের চেষ্টার সাথে পূর্বের কোনো ঘটনার যোগসূত্রতা আছে কি না, তা স্পষ্ট হবে।